যুদ্ধ পরিস্থিতি : রাষ্ট্র ও বিপ্লব এবং নবারুণ
হারবার্ট এর পর নকশালবাড়ির বিপ্লবী রাজনীতি, রাষ্ট্র ও বিপ্লবের আঙ্গিনায়
নবারুণ আবার ফিরলেন ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’তে। মাঝে লিখেছেন ‘ভোগী’। হারবার্ট এ
নকশালবাড়ির যোদ্ধা বিনু ছিল এক পার্শ্ব চরিত্র আর নায়ক হারবার্ট তাতে নেহাতই ক্ষীণভাবে
ক্ষণিক সময়ের জন্য যুক্ত। ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’র নায়ক রণজয় কিন্তু সরাসরি নকশালবাড়ি রাজনীতির মানুষ, তার
স্মৃতি আর সত্তা বিপ্লবী ভাবনায় জারিত। একদা গেরিলা যোদ্ধা ও বর্তমানে মানসিক
ভারসাম্য হারানো প্রৌঢ় যে রণজয়কে আমরা এই আখ্যানে দেখি সে সত্তরের আগুনঝরা সময়ে রাষ্ট্রের
সঙ্গে রণে নেমেছিল এবং ধাক্কার মুখে পড়েছিল। রণজয় ও তার বিপ্লব প্রচেষ্টা রাষ্ট্রের
তীব্র দমননীতি এবং আরো কিছু কারণে আপাত পরাজিত কিন্তু লড়াইয়ের অঙ্গীকারে তারপরেও
আত্মজাগ্রত। সময়টা সত্তরের পর কেটে গেছে আরো পঁচিশ বছর। কিন্তু ১৯৯৪ তে, যে বছর সি
পি আই (এম) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারও আপোষ করে নিল কেন্দ্রের নয়া উদারনীতির
সঙ্গে, যখন রাষ্ট্রের সঙ্গে মোকাবিলার জন্য লুকিয়ে রাখা রাইফেলের স্তুপের ওপর উঠে গেল
ফ্ল্যাটবাড়ি, সে বছরও রণজয় গেরিলা যুদ্ধ আর বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাতেই নিবিষ্ট। ‘বাস্তবতা’ মেনেই সমাজ সংসার
আর পারিবারিক শুভ্যানুধায়ীদের তৎপরতায় তার স্থান হয় মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
কিন্তু সেখানে থাকলেও বিপ্লবের নির্মম শত্রু, রাষ্ট্রের সতর্ক পাহারাদার সারমেয়গণ,
যেমন দেবী রায়ের ডানহাত বসাক, তার ভয় থেকে মুক্ত হতে পারে না, কারণ ‘শ্রেণিশত্রু লিক্যুইডেট’ করার কাজ শেষ হয়
নি।
যুদ্ধ পরিস্থিতি উপন্যাসের নায়ক রণজয় বস্তুত বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষার এক
এমবডিমেন্ট। তার চেতনায় ভীড় করে ছিল, আছে, চিরকাল থাকবে রুশ বিপ্লব, চীন বিপ্লব, মার্কিন
আগ্রাসন ও ন্যাপাম বোমার মুখে ভিয়েতনামের প্রতিবাদী প্রতিরোধ, ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রাম,
নকশালবাড়ির বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, কমরেড লেনিন, কমরেড স্ট্যালিন, কমরেড মাও সে তুং,
কমরেড ও শ্রদ্ধেয় নেতা চারু মজুমদার। ভীড় করে আছে অসংখ্য সহযোদ্ধা কমরেড যারা স্বপ্ন
দেখেছে, লড়াই করেছে, অত্যাচারিত হয়েছে, শহীদ হয়েছে - বারাসাতে, বেলেঘাটায়,
বরানগরে, কাশীপুরে, সন্তোষপুরে, মেদিনীপুরে, মুর্শিদাবাদে, পুলিশ লক আপে, ময়দানে,
দিনের আলোয়, রাতের অন্ধকারে। বস্তুতপক্ষে ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ উপন্যাসটি একই
সঙ্গে সত্তরের উত্তুঙ্গ দিনকালের বিশ্বস্ত দিনলিপি আবার আবহমান বিপ্লবী স্বপ্নের
চিরায়ত নির্যাস হিসেবে আমাদের সামনে হাজির থাকে।
‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ উপন্যাসে একটানা
কোনও কাহিনী নেই। আছে রণজয় ও তার কাছাকাছি থাকা কিছু মানুষের জীবনের টুকরো টুকরো কিছু
কথা। রণজয় এর মধ্য দিয়ে একটি যুদ্ধ পরিস্থিতিকেই আসলে নবারুণ এখানে সামনে এনেছেন।
প্রত্যক্ষত নকশালবাড়ি আন্দোলন এই যুদ্ধ পরিস্থিতির কেন্দ্রে, কিন্তু তাকে ঘিরে আছে
আরো আরো যুদ্ধ পরিস্থিতি, যার কোনটা রাশিয়ার পেট্রোগ্রাডে, কোনটা চীনে লং মার্চে,
কোনটা ভিয়েতনামে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, আবার কোনটা স্পেনে ফ্রাঙ্কোর
ফ্যাসিবাদী হামলার বিরুদ্ধে, কোনটা নাৎসি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চলমান। আখ্যানকার
নবারুণ ব্যক্তিগতভাবেও যে নকশালবাড়ির বিপ্লবী রাজনীতি দ্বারা কতটা প্রানিত
হয়েছিলেন সেটা বিভিন্ন সময়ে নানা সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি জানিয়েছেন। ১৯৯৮ এ ‘তথ্যকেন্দ্র’ পত্রিকাকে দেওয়া
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন “ সত্তরের আন্দোলন দ্বারা যে আমি প্রভাবিত হয়েছিলাম একথা তো
সবাই জানে। আমার রেসপন্সটা কিন্তু ছিল লেখক হিসেবেই। আমার যেটা দায় সেটা আমি লেখা
দিয়েই পূরণ করে দিয়েছি। সত্তরের ত্যাগটা যদি আমাদের এখানে কেউ অস্বীকার করে বা
ভুলে যায় তাহলে সে খুব অন্যায় কাজ করবে”। [নবারুণ ভট্টাচার্যর উপন্যাস সমগ্রর গ্রন্থ পরিচিতি থেকে
গৃহীত]
উপন্যাসের মেরুদণ্ড যুদ্ধ পরিস্থিতি হওয়ায় এখানে স্বাভাবিকভাবেই
সশস্ত্র অভ্যুত্থান ও গেরিলা রণনীতি নিয়ে বিস্তৃত বয়ান আছে। নকশালবাড়ি আন্দোলনের
পর্বে বিশেষত প্রথম দিকে চারু মজুমদারের নির্দেশ ছিল ঘরোয়া অস্ত্র ব্যবহারের ওপর
জোর দিতে হবে। কৃষকদের মধ্যে থেকেই বানিয়ে নিতে হবে আর্মড ইউনিট। চেয়ারম্যান মাও
শিখিয়েছিলেন অস্ত্র যেন রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ না করে, রাজনীতি যেন অস্ত্রকে
নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মধ্যবিত্ত স্তর থেকে আসা বুদ্ধিজীবী কমরেডদের আগ্নেয়াস্ত্র
ব্যবহারের দিকে একটা ঝোঁক ছিলই। রণজয় চারু মজুমদারকে বোঝার চেষ্টা করেছে। “রাত করে কোনও সভা
? সেখানে গেরিলা অ্যাকশন সম্বন্ধে কমরেড মজুমদারের কথাগুলো বোঝার ও বোঝানোর চেষ্টা
করা ? বুদ্ধিজীবী সংগ্রামী হিসেবে সঙ্গে একটা ছোট পিস্তল ছিল ? কিন্তু কমরেড, লড়াই
এর এই স্তরে কোনোরকম আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। রণজয় কুপির আলোটার দিকে
এগোয়। গেরিলা ইউনিটকে সম্পূর্ণভাবে দা, বল্লম, সরকি, কাস্তের ওপর আস্থা রাখতে হবে।
না কমরেড, এটা দেশী বন্দুক কেনা বা তৈরি করা বা বন্দুক দখলের পক্ষে উপযুক্ত সময়
নয়। হাতে বন্দুক পেলেই কি আমরা দখলে রাখতে পারব ? না। পুলিশ ঠিক ওগুলো দখল করে
নেবে”। আন্দোলনের পরবর্তী পর্বে রাষ্ট্রের দমননীতির বিরুদ্ধে রণকৌশল বদলাতে হয়।
বন্দুক দখল ও ব্যবহারের ওপর জোর পড়ে। “ওখানে একটা লোকাল অপারেশন চলছে। তাকে প্রতিহত করতে, কোণঠাসা
করতে চূর্ণ করতে দরকার অস্ত্রের। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চীনা গণমুক্তি ফৌজ ৩২০ টি
রাইফেল নিয়ে বিপ্লবী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমরা না হয় ৬০ টি রাইফেল আর ২০০ টি
পাইপগান নিয়ে আমাদের প্রথম গণমুক্তি ফৌজ তৈরি করব”।
মাও সে তুং এর গেরিলা যুদ্ধ সম্পর্কিত নির্দেশিকাকে রণজয়ের ভাবনাসূত্রে সরাসরি
তুলে এনেছেন নবারুণ। “ঘাঁটি এলাকা গড়ে তুলতে হলে প্রথমে চাই একটি স্থায়ী সৈন্যবাহিনী
এবং চাই রাজনীতি সচেতন জনতা। এই দুটি শর্ত পালিত হলেই টেরেনের প্রশ্ন আসে। টেরেনের
প্রশ্নের দুটি দিক আছে। একটা প্রাকৃতিক এবং অন্যটা নিজেদের হাতে তৈরি করা।
সমতলভূমিতে ঘাঁটি এলাকা হতে পারে। তার প্রমাণ জাপ-বিরোধী যুদ্ধের সময় পিকিং শহরের
উপকন্ঠে সাতটি এরকম ঘাঁটি গড়ে উঠেছিল”।
গ্রামাঞ্চলে কৃষক আন্দোলনের ওপর ভর করেই এগোতে চেয়েছিল নকশালবাড়ির
মুক্তিসংগ্রাম, আর তাই ছাত্র যুবদের ডাক দেওয়া হয়েছিল ‘গ্রামে চলো’। তরুণ শিক্ষক,
ইতিহাসের মেধাবী ছাত্র রণজয় এই ডাকে সারা দিয়েই গিয়েছিল উত্তরবঙ্গে। গিয়েছিল
শ্রদ্ধেয় নেতার নির্দেশ মেনে ‘ভূমিহীন কৃষকের সঙ্গে একাত্ম হতে’। এরকমই আরো অজস্র
নবীন প্রাণ সাথী হয়েছিল রণজয়ের। বাস্তবের এক চরিত্র যাদবপুরের স্নাতকোত্তরের বাংলা
বিভাগের ছাত্র, সম্ভবনাময় সাহিত্যিক তিমির বরণ সিংহর কর্মকাণ্ড ও শহীদ হবার
প্রসঙ্গ এখানে এনেছেন নবারুণ। এসেছে বাস্তব ও বাস্তবকল্প এরকম আরো অনেক চরিত্র।
বিপ্লবী কর্মকাণ্ডকে ‘শোধনবাদী চিন্তা’র মোকাবিলা করেই এগোতে হয়, নকশালবাড়ি আন্দোলন ও তার
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই দিশা ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনে শুধু নয়, আন্তর্জাতিক
কমিউনিস্ট আন্দোলনেই সতর্কবার্তা হিসেবে বারবার এসেছে। বিভিন্ন প্রসঙ্গে নবারুণ
এখানে সেগুলি ছুঁয়ে গিয়েছেন। কমিউনিস্ট শিবিরের মধ্যেকার ‘টু লাইন স্ট্রাগল’ বস্তুতপক্ষে
এখানে জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই লড়াইকে রণজয়ের আত্মস্থ করার সূত্রে। রণজয় স্মরণ করে মাও
এর সেই অমোঘ উক্তি। “বিপ্লব কোনও ভোজসভা নয়। সূচিশিল্প বা প্রবন্ধ রচনা নয়”। রণজয় তার পাঠ
অভিজ্ঞতা থেকে জানে “বিপ্লবের পথে শ্রেণি শত্রুরা ছাড়াও, মেকি বিপ্লবী ও দালাল
গুপ্তচরদের বাধা থাকবেই – সেই কাউটস্কি, বার্নস্টাইন থেকে শুরু করে মেনশেভিক,
জিনোভিয়েভ, কামেনেভ, বুখারিন, ট্রটস্কি, লি শাও চি-দের কথা ভুললে চলবে না। ভুললে
চলবে না ডাঙ্গেচক্র, নয়া সংশোধনবাদী ও খোকনচক্রের কথা”।
তবে রণজয় যাদের শোধনবাদী পণ্ডিত বলেছে, তাদের বই থেকেও প্রয়োজনীয় শিক্ষা
গ্রহণের বিষয়ে কোনও ছুৎমার্গ দেখায় নি। ইতিহাসবিদ সুশোভন সরকারের কথা এখানে এসেছে।
বস্তুতপক্ষে যুদ্ধ পরিস্থিতির মোকাবিলার এক বিরাট পাঠ প্রস্তুতির তালিকা হাজির
করেন নবারুণ। ছেলে কোবা পড়বে এসব বই, প্রস্তুত হবে আগামী এক যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য
এমনই ভাবে রণজয়। “কোবা বড় হয়ে ‘দুনিয়া কাঁপানো দশদিন’ পড়বে। চাপায়েভের
গল্প পড়বে। ‘ধীরে বহে ডন’ ও ‘সাগরে মিলায়ে ডন’ পড়বে। পড়বে ডাইসন কার্তার এর সোভিয়েত বিজ্ঞান, লিও
কিয়াচেলি-র ‘নতুন দিনের আলো’, ডিয়ানা লেভিন এর সোভিয়েত রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা,
দিলীপকুমার মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘ছোটদের সোভিয়েত’, তিন খণ্ডে অমল দাশগুপ্ত, রবীন্দ্র মজুমদার ও অনিল কুমার
সিংহের অনুবাদে ১৯৪২ সালের স্ট্যালিন পুরস্কার পাওয়া ‘পারীর পতন’, লু সুন, লাও
চাও, তিৎ লিঙ ও অন্যান্য পাঁচজনের লেখা এগারোটি গল্প, নীহার দাশগুপ্তের অনুবাদে
গোর্কির নবজাতক ...”। ছাত্র কৌশিক কে ইতিহাসের তরুণ শিক্ষক রণজয় পাঠক্রমের
বাইরে গিয়েই এক ব্যাপ্ত জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, পড়তে দিয়েছিল অনেক বই। “রণজয় কৌশিককে
একটার পর একটা বই পড়তে দিত। ঘন্টার পর ঘন্টা ওকে যুদ্ধের গল্প, স্তালিনগ্রাদ, লং
মার্চ, ভিয়েতনাম, কিউবার মুক্তিযুদ্ধ বর্ণনা করে যেত”। রণজয়ের স্মৃতি
আর সত্তার মধ্যে সংযোগের উপায় হিসেবে রাস্তা থেকে খুঁজে পাওয়া মানুষটিকে অনেক দিন
আগে তারই দেওয়া বইগুলি দেখানোর কথা ভাবে কৌশিক। “ কৌশিকের মনে হল
রণজয়দার সই করা একটা বই নিয়ে গিয়ে বলবে যে বইটা চিনতে পারছে কিনা। যেমন, ভিলহেলম
লিবনেখত এর ‘অন দা পলিটিকাল পোজিশন অফ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসি’ বা
কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদে ক্লারা সেৎকিন এর ‘আমার স্মৃতিতে
লেনিন’ অথবা ‘রিডার্স গাইড টু দা মার্কসিস্ট ক্লাসিকস’ – মরিস কনফোর্থের – লরেন্স অ্যান্ড
উইশার্ট লিমিটেড, ১৯৫৩ বা গিওর্গি দিমিত্রভের’ইউনাইটেড ফ্রন্ট
অব দা ওয়ার্কিং ক্লাস এগেন্সট ফ্যাসিজম”।
একটি বিপ্লব প্রচেষ্টা শত্রুর আক্রমণ ও অন্যান্য কারণে কিছুটা পিছু হঠতে বাধ্য
হয়েছে। কিন্তু এজন্যই যারা নকশালবাড়ি আন্দোলন তথা ভারতে বিপ্লব প্রচেষ্টার
পোস্টমর্টেম শুরু করে দিয়েছিলেন, নবারুণ বা তার উপন্যাসের নায়ক রণজয় তাদের
বিপ্রতীপ মেরুতে অবস্থান করেন। বাস্তবের মাটিতেও আমরা দেখেছি সত্তরের ব্যর্থতা ও
ভুলগুলি থেকে নিজস্ব নিজস্ব বিশ্লেষণ অনুযায়ী শিক্ষা নিয়ে, ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু
দৃপ্ত বলিষ্ঠতায় বিপ্লবী গণ আন্দোলনগুলি গড়ে উঠছে, বিহারের আরা ভোজপুরের স্ফুলিঙ্গ
ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত হিন্দি বলয়ে, অন্ধ্রের বারুদ বিস্ফোরিত হচ্ছে আদিবাদী
বাসভূমিগুলিতে। গণ আন্দোলনের ঢেউয়ে ঢেউয়ে রাষ্ট্রের দমন পীড়নকে উপেক্ষা করে নকশালবাড়ির
শপথকে, তেভাগা তেলেঙ্গানার উত্তরাধিকারকে মনে রাখা হচ্ছে। এজন্য দরকার ছিল সত্তরের
ধাক্কার পর সংহত হবার, তৈরি হবার জেদটা। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনকেও এরকম
ধাক্কা ও পুনর্গঠনের পর্বের মুখোমুখি হতে হয়েছে। চীনে সাংহাই বিপর্যয়ের পর বা
রাশিয়ায় ১৯০৫ এর বিপ্লবী আন্দোলনের সাময়িক স্থিতাবস্থার পর এরকম পরিস্থিতি এসেছিল।
পিছু হঠার জন্য নয়, নতুন শুরুর প্রস্তুতির জন্যই বিপ্লবী আন্দোলনে কখনো কখনো ‘োয়ান স্টেপ
ফরওয়ার্ড টু স্টেপ ব্যাক’ জাতীয় কৌশলের দরকার হয়। এই উপন্যাসে লেনিনের শিক্ষাকে সরাসরি
সামনে আনা হয়েছে আগামী দিনে রাষ্ট্র ও বিপ্লবের আরেকটি নতুন অধ্যায় লেখার জন্যই। “পৃথিবীব্যাপী
বিপ্লবের প্রথম জলোচ্ছ্বাস সরে গেছে, দ্বিতীয়টি এখনো ওঠেনি। এ বিষয়ে কোনোরকম
বিভ্রম পোষণ করা আমাদের পক্ষে বিপজ্জনক হবে। আমরা সম্রাট জারেক্স নই যিনি সমুদ্রকে
শেকল দিয়ে আঘাত করতে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনা পরম্পরাকে এইভাবে বোঝার অর্থ কি
চুপ করে বসে থাকা, অর্থাৎ লড়াই পরিত্যাগ করা ? ... আমাদের তৈরি হতে হবে, খুব ভালো
করে তৈরি হতে হবে যাতে ভবিষ্যতে বিপ্লবের ঢেউ এলে তাকে সজ্ঞানে ও সবলে সম্যকভাবে
কাজে লাগাতে পারি”।