Tuesday, April 25, 2017

যুদ্ধ পরিস্থিতি : রাষ্ট্র ও বিপ্লব এবং নবারুণ



যুদ্ধ পরিস্থিতি : রাষ্ট্র ও বিপ্লব এবং নবারুণ

হারবার্ট এর পর নকশালবাড়ির বিপ্লবী রাজনীতি, রাষ্ট্র ও বিপ্লবের আঙ্গিনায় নবারুণ আবার ফিরলেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে। মাঝে লিখেছেন ভোগী। হারবার্ট এ নকশালবাড়ির যোদ্ধা বিনু ছিল এক পার্শ্ব চরিত্র আর নায়ক হারবার্ট তাতে নেহাতই ক্ষীণভাবে ক্ষণিক সময়ের জন্য যুক্ত। যুদ্ধ পরিস্থিতির নায়ক রণজয় কিন্তু সরাসরি নকশালবাড়ি রাজনীতির মানুষ, তার স্মৃতি আর সত্তা বিপ্লবী ভাবনায় জারিত। একদা গেরিলা যোদ্ধা ও বর্তমানে মানসিক ভারসাম্য হারানো প্রৌঢ় যে রণজয়কে আমরা এই আখ্যানে দেখি সে সত্তরের আগুনঝরা সময়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে রণে নেমেছিল এবং ধাক্কার মুখে পড়েছিল। রণজয় ও তার বিপ্লব প্রচেষ্টা রাষ্ট্রের তীব্র দমননীতি এবং আরো কিছু কারণে আপাত পরাজিত কিন্তু লড়াইয়ের অঙ্গীকারে তারপরেও আত্মজাগ্রত। সময়টা সত্তরের পর কেটে গেছে আরো পঁচিশ বছর। কিন্তু ১৯৯৪ তে, যে বছর সি পি আই (এম) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারও আপোষ করে নিল কেন্দ্রের নয়া উদারনীতির সঙ্গে, যখন রাষ্ট্রের সঙ্গে মোকাবিলার জন্য লুকিয়ে রাখা রাইফেলের স্তুপের ওপর উঠে গেল ফ্ল্যাটবাড়ি, সে বছরও রণজয় গেরিলা যুদ্ধ আর বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাতেই নিবিষ্ট। বাস্তবতা মেনেই সমাজ সংসার আর পারিবারিক শুভ্যানুধায়ীদের তৎপরতায় তার স্থান হয় মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু সেখানে থাকলেও বিপ্লবের নির্মম শত্রু, রাষ্ট্রের সতর্ক পাহারাদার সারমেয়গণ, যেমন দেবী রায়ের ডানহাত বসাক, তার ভয় থেকে মুক্ত হতে পারে না, কারণ শ্রেণিশত্রু লিক্যুইডেট করার কাজ শেষ হয় নি।
যুদ্ধ পরিস্থিতি উপন্যাসের নায়ক রণজয় বস্তুত বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষার এক এমবডিমেন্ট। তার চেতনায় ভীড় করে ছিল, আছে, চিরকাল থাকবে রুশ বিপ্লব, চীন বিপ্লব, মার্কিন আগ্রাসন ও ন্যাপাম বোমার মুখে ভিয়েতনামের প্রতিবাদী প্রতিরোধ, ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রাম, নকশালবাড়ির বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, কমরেড লেনিন, কমরেড স্ট্যালিন, কমরেড মাও সে তুং, কমরেড ও শ্রদ্ধেয় নেতা চারু মজুমদার। ভীড় করে আছে অসংখ্য সহযোদ্ধা কমরেড যারা স্বপ্ন দেখেছে, লড়াই করেছে, অত্যাচারিত হয়েছে, শহীদ হয়েছে - বারাসাতে, বেলেঘাটায়, বরানগরে, কাশীপুরে, সন্তোষপুরে, মেদিনীপুরে, মুর্শিদাবাদে, পুলিশ লক আপে, ময়দানে, দিনের আলোয়, রাতের অন্ধকারে। বস্তুতপক্ষে যুদ্ধ পরিস্থিতি উপন্যাসটি একই সঙ্গে সত্তরের উত্তুঙ্গ দিনকালের বিশ্বস্ত দিনলিপি আবার আবহমান বিপ্লবী স্বপ্নের চিরায়ত নির্যাস হিসেবে আমাদের সামনে হাজির থাকে।
যুদ্ধ পরিস্থিতি উপন্যাসে একটানা কোনও কাহিনী নেই। আছে রণজয় ও তার কাছাকাছি থাকা কিছু মানুষের জীবনের টুকরো টুকরো কিছু কথা। রণজয় এর মধ্য দিয়ে একটি যুদ্ধ পরিস্থিতিকেই আসলে নবারুণ এখানে সামনে এনেছেন। প্রত্যক্ষত নকশালবাড়ি আন্দোলন এই যুদ্ধ পরিস্থিতির কেন্দ্রে, কিন্তু তাকে ঘিরে আছে আরো আরো যুদ্ধ পরিস্থিতি, যার কোনটা রাশিয়ার পেট্রোগ্রাডে, কোনটা চীনে লং মার্চে, কোনটা ভিয়েতনামে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, আবার কোনটা স্পেনে ফ্রাঙ্কোর ফ্যাসিবাদী হামলার বিরুদ্ধে, কোনটা নাৎসি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চলমান। আখ্যানকার নবারুণ ব্যক্তিগতভাবেও যে নকশালবাড়ির বিপ্লবী রাজনীতি দ্বারা কতটা প্রানিত হয়েছিলেন সেটা বিভিন্ন সময়ে নানা সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি জানিয়েছেন। ১৯৯৮ এ তথ্যকেন্দ্র পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন সত্তরের আন্দোলন দ্বারা যে আমি প্রভাবিত হয়েছিলাম একথা তো সবাই জানে। আমার রেসপন্সটা কিন্তু ছিল লেখক হিসেবেই। আমার যেটা দায় সেটা আমি লেখা দিয়েই পূরণ করে দিয়েছি। সত্তরের ত্যাগটা যদি আমাদের এখানে কেউ অস্বীকার করে বা ভুলে যায় তাহলে সে খুব অন্যায় কাজ করবে। [নবারুণ ভট্টাচার্যর উপন্যাস সমগ্রর গ্রন্থ পরিচিতি থেকে গৃহীত]
 উপন্যাসের মেরুদণ্ড যুদ্ধ পরিস্থিতি হওয়ায় এখানে স্বাভাবিকভাবেই সশস্ত্র অভ্যুত্থান ও গেরিলা রণনীতি নিয়ে বিস্তৃত বয়ান আছে। নকশালবাড়ি আন্দোলনের পর্বে বিশেষত প্রথম দিকে চারু মজুমদারের নির্দেশ ছিল ঘরোয়া অস্ত্র ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। কৃষকদের মধ্যে থেকেই বানিয়ে নিতে হবে আর্মড ইউনিট। চেয়ারম্যান মাও শিখিয়েছিলেন অস্ত্র যেন রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ না করে, রাজনীতি যেন অস্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মধ্যবিত্ত স্তর থেকে আসা বুদ্ধিজীবী কমরেডদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের দিকে একটা ঝোঁক ছিলই। রণজয় চারু মজুমদারকে বোঝার চেষ্টা করেছে। রাত করে কোনও সভা ? সেখানে গেরিলা অ্যাকশন সম্বন্ধে কমরেড মজুমদারের কথাগুলো বোঝার ও বোঝানোর চেষ্টা করা ? বুদ্ধিজীবী সংগ্রামী হিসেবে সঙ্গে একটা ছোট পিস্তল ছিল ? কিন্তু কমরেড, লড়াই এর এই স্তরে কোনোরকম আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। রণজয় কুপির আলোটার দিকে এগোয়। গেরিলা ইউনিটকে সম্পূর্ণভাবে দা, বল্লম, সরকি, কাস্তের ওপর আস্থা রাখতে হবে। না কমরেড, এটা দেশী বন্দুক কেনা বা তৈরি করা বা বন্দুক দখলের পক্ষে উপযুক্ত সময় নয়। হাতে বন্দুক পেলেই কি আমরা দখলে রাখতে পারব ? না। পুলিশ ঠিক ওগুলো দখল করে নেবে। আন্দোলনের পরবর্তী পর্বে রাষ্ট্রের দমননীতির বিরুদ্ধে রণকৌশল বদলাতে হয়। বন্দুক দখল ও ব্যবহারের ওপর জোর পড়ে। ওখানে একটা লোকাল অপারেশন চলছে। তাকে প্রতিহত করতে, কোণঠাসা করতে চূর্ণ করতে দরকার অস্ত্রের। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চীনা গণমুক্তি ফৌজ ৩২০ টি রাইফেল নিয়ে বিপ্লবী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমরা না হয় ৬০ টি রাইফেল আর ২০০ টি পাইপগান নিয়ে আমাদের প্রথম গণমুক্তি ফৌজ তৈরি করব
মাও সে তুং এর গেরিলা যুদ্ধ সম্পর্কিত নির্দেশিকাকে রণজয়ের ভাবনাসূত্রে সরাসরি তুলে এনেছেন নবারুণ। ঘাঁটি এলাকা গড়ে তুলতে হলে প্রথমে চাই একটি স্থায়ী সৈন্যবাহিনী এবং চাই রাজনীতি সচেতন জনতা। এই দুটি শর্ত পালিত হলেই টেরেনের প্রশ্ন আসে। টেরেনের প্রশ্নের দুটি দিক আছে। একটা প্রাকৃতিক এবং অন্যটা নিজেদের হাতে তৈরি করা। সমতলভূমিতে ঘাঁটি এলাকা হতে পারে। তার প্রমাণ জাপ-বিরোধী যুদ্ধের সময় পিকিং শহরের উপকন্ঠে সাতটি এরকম ঘাঁটি গড়ে উঠেছিল


গ্রামাঞ্চলে কৃষক আন্দোলনের ওপর ভর করেই এগোতে চেয়েছিল নকশালবাড়ির মুক্তিসংগ্রাম, আর তাই ছাত্র যুবদের ডাক দেওয়া হয়েছিল গ্রামে চলো। তরুণ শিক্ষক, ইতিহাসের মেধাবী ছাত্র রণজয় এই ডাকে সারা দিয়েই গিয়েছিল উত্তরবঙ্গে। গিয়েছিল শ্রদ্ধেয় নেতার নির্দেশ মেনে ভূমিহীন কৃষকের সঙ্গে একাত্ম হতে। এরকমই আরো অজস্র নবীন প্রাণ সাথী হয়েছিল রণজয়ের। বাস্তবের এক চরিত্র যাদবপুরের স্নাতকোত্তরের বাংলা বিভাগের ছাত্র, সম্ভবনাময় সাহিত্যিক তিমির বরণ সিংহর কর্মকাণ্ড ও শহীদ হবার প্রসঙ্গ এখানে এনেছেন নবারুণ। এসেছে বাস্তব ও বাস্তবকল্প এরকম আরো অনেক চরিত্র।

বিপ্লবী কর্মকাণ্ডকে শোধনবাদী চিন্তার মোকাবিলা করেই এগোতে হয়, নকশালবাড়ি আন্দোলন ও তার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই দিশা ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনে শুধু নয়, আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনেই সতর্কবার্তা হিসেবে বারবার এসেছে। বিভিন্ন প্রসঙ্গে নবারুণ এখানে সেগুলি ছুঁয়ে গিয়েছেন। কমিউনিস্ট শিবিরের মধ্যেকার টু লাইন স্ট্রাগল বস্তুতপক্ষে এখানে জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই লড়াইকে রণজয়ের আত্মস্থ করার সূত্রে। রণজয় স্মরণ করে মাও এর সেই অমোঘ উক্তি। বিপ্লব কোনও ভোজসভা নয়। সূচিশিল্প বা প্রবন্ধ রচনা নয়। রণজয় তার পাঠ অভিজ্ঞতা থেকে জানে বিপ্লবের পথে শ্রেণি শত্রুরা ছাড়াও, মেকি বিপ্লবী ও দালাল গুপ্তচরদের বাধা থাকবেই সেই কাউটস্কি, বার্নস্টাইন থেকে শুরু করে মেনশেভিক, জিনোভিয়েভ, কামেনেভ, বুখারিন, ট্রটস্কি, লি শাও চি-দের কথা ভুললে চলবে না। ভুললে চলবে না ডাঙ্গেচক্র, নয়া সংশোধনবাদী ও খোকনচক্রের কথা 

তবে রণজয় যাদের শোধনবাদী পণ্ডিত বলেছে, তাদের বই থেকেও প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ে কোনও ছুৎমার্গ দেখায় নি। ইতিহাসবিদ সুশোভন সরকারের কথা এখানে এসেছে। বস্তুতপক্ষে যুদ্ধ পরিস্থিতির মোকাবিলার এক বিরাট পাঠ প্রস্তুতির তালিকা হাজির করেন নবারুণ। ছেলে কোবা পড়বে এসব বই, প্রস্তুত হবে আগামী এক যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য এমনই ভাবে রণজয়। কোবা বড় হয়ে দুনিয়া কাঁপানো দশদিন পড়বে। চাপায়েভের গল্প পড়বে। ধীরে বহে ডনসাগরে মিলায়ে ডন পড়বে। পড়বে ডাইসন কার্তার এর সোভিয়েত বিজ্ঞান, লিও কিয়াচেলি-র নতুন দিনের আলো, ডিয়ানা লেভিন এর সোভিয়েত রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা, দিলীপকুমার মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ছোটদের সোভিয়েত, তিন খণ্ডে অমল দাশগুপ্ত, রবীন্দ্র মজুমদার ও অনিল কুমার সিংহের অনুবাদে ১৯৪২ সালের স্ট্যালিন পুরস্কার পাওয়া পারীর পতন, লু সুন, লাও চাও, তিৎ লিঙ ও অন্যান্য পাঁচজনের লেখা এগারোটি গল্প, নীহার দাশগুপ্তের অনুবাদে গোর্কির নবজাতক ...। ছাত্র কৌশিক কে ইতিহাসের তরুণ শিক্ষক রণজয় পাঠক্রমের বাইরে গিয়েই এক ব্যাপ্ত জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, পড়তে দিয়েছিল অনেক বই। রণজয় কৌশিককে একটার পর একটা বই পড়তে দিত। ঘন্টার পর ঘন্টা ওকে যুদ্ধের গল্প, স্তালিনগ্রাদ, লং মার্চ, ভিয়েতনাম, কিউবার মুক্তিযুদ্ধ বর্ণনা করে যেত। রণজয়ের স্মৃতি আর সত্তার মধ্যে সংযোগের উপায় হিসেবে রাস্তা থেকে খুঁজে পাওয়া মানুষটিকে অনেক দিন আগে তারই দেওয়া বইগুলি দেখানোর কথা ভাবে কৌশিক। কৌশিকের মনে হল রণজয়দার সই করা একটা বই নিয়ে গিয়ে বলবে যে বইটা চিনতে পারছে কিনা। যেমন, ভিলহেলম লিবনেখত এর অন দা পলিটিকাল পোজিশন অফ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসি বা কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদে ক্লারা সেৎকিন এর আমার স্মৃতিতে লেনিন অথবা রিডার্স গাইড টু দা মার্কসিস্ট ক্লাসিকস মরিস কনফোর্থের লরেন্স অ্যান্ড উইশার্ট লিমিটেড, ১৯৫৩ বা গিওর্গি দিমিত্রভেরইউনাইটেড ফ্রন্ট অব দা ওয়ার্কিং ক্লাস এগেন্সট ফ্যাসিজম
একটি বিপ্লব প্রচেষ্টা শত্রুর আক্রমণ ও অন্যান্য কারণে কিছুটা পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এজন্যই যারা নকশালবাড়ি আন্দোলন তথা ভারতে বিপ্লব প্রচেষ্টার পোস্টমর্টেম শুরু করে দিয়েছিলেন, নবারুণ বা তার উপন্যাসের নায়ক রণজয় তাদের বিপ্রতীপ মেরুতে অবস্থান করেন। বাস্তবের মাটিতেও আমরা দেখেছি সত্তরের ব্যর্থতা ও ভুলগুলি থেকে নিজস্ব নিজস্ব বিশ্লেষণ অনুযায়ী শিক্ষা নিয়ে, ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু দৃপ্ত বলিষ্ঠতায় বিপ্লবী গণ আন্দোলনগুলি গড়ে উঠছে, বিহারের আরা ভোজপুরের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত হিন্দি বলয়ে, অন্ধ্রের বারুদ বিস্ফোরিত হচ্ছে আদিবাদী বাসভূমিগুলিতে। গণ আন্দোলনের ঢেউয়ে ঢেউয়ে রাষ্ট্রের দমন পীড়নকে উপেক্ষা করে নকশালবাড়ির শপথকে, তেভাগা তেলেঙ্গানার উত্তরাধিকারকে মনে রাখা হচ্ছে। এজন্য দরকার ছিল সত্তরের ধাক্কার পর সংহত হবার, তৈরি হবার জেদটা। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনকেও এরকম ধাক্কা ও পুনর্গঠনের পর্বের মুখোমুখি হতে হয়েছে। চীনে সাংহাই বিপর্যয়ের পর বা রাশিয়ায় ১৯০৫ এর বিপ্লবী আন্দোলনের সাময়িক স্থিতাবস্থার পর এরকম পরিস্থিতি এসেছিল। পিছু হঠার জন্য নয়, নতুন শুরুর প্রস্তুতির জন্যই বিপ্লবী আন্দোলনে কখনো কখনো োয়ান স্টেপ ফরওয়ার্ড টু স্টেপ ব্যাক জাতীয় কৌশলের দরকার হয়। এই উপন্যাসে লেনিনের শিক্ষাকে সরাসরি সামনে আনা হয়েছে আগামী দিনে রাষ্ট্র ও বিপ্লবের আরেকটি নতুন অধ্যায় লেখার জন্যই। পৃথিবীব্যাপী বিপ্লবের প্রথম জলোচ্ছ্বাস সরে গেছে, দ্বিতীয়টি এখনো ওঠেনি। এ বিষয়ে কোনোরকম বিভ্রম পোষণ করা আমাদের পক্ষে বিপজ্জনক হবে। আমরা সম্রাট জারেক্স নই যিনি সমুদ্রকে শেকল দিয়ে আঘাত করতে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনা পরম্পরাকে এইভাবে বোঝার অর্থ কি চুপ করে বসে থাকা, অর্থাৎ লড়াই পরিত্যাগ করা ? ... আমাদের তৈরি হতে হবে, খুব ভালো করে তৈরি হতে হবে যাতে ভবিষ্যতে বিপ্লবের ঢেউ এলে তাকে সজ্ঞানে ও সবলে সম্যকভাবে কাজে লাগাতে পারি

হারবার্ট, নবারুণ এবং বিদ্রোহ বিস্ফোরণের সম্ভাবনা প্রভৃতি



নবারুণ এবং বিদ্রোহ বিস্ফোরণের সম্ভাবনা প্রভৃতি
হারবার্ট
সেটা ১৯৯২প্রমা সাহিত্য পত্রিকার শারদ সংখ্যায় তখন ছাপা হয়েছে হারবার্টসেটাই নবারুণের প্রথম উপন্যাসএর আগে তাঁর পরিচিতি ছিল ‘মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়’ নামে আলোড়ন তোলা কবিতার বইয়ের রচনাকার হিসেবেহারবার্ট এর আগেই অবশ্য প্রকাশিত হয়েছে নবারুণের গল্পের একটি সংকলন – ‘হালাল ঝান্ডা’, তবু ‘হারবার্ট’ এর মধ্য দিয়েই বৃহত্তর পাঠক সমাজ কথাকার নবারুণের সঙ্গে পরিচিত হলেনপরবর্তী দু দশক জুড়ে সেই পরিচয় ক্রমশ ব্যাপ্ত হয়েছেনবারুণ জনমনোরঞ্জনী রচনা না লিখেও এক বলিষ্ঠ কথাকার হিসেবে নন্দিত হয়েছেন, বহুপঠিত হয়েছেতাঁর সৃষ্ট ফ্যাতাড়ু চরিত্রগুলি সাম্প্রতিক সময়ের সাহিত্যের মিথ হয়ে উঠেছেচলচ্চিত্রর পর্দা থেকে নাটকের মঞ্চ – ছোট পত্রিকার আড্ডা/লেখা থেকে সিরিয়াস রাজনৈতিক ভাবনা – সবেতেই নবারুণ এর লেখালেখি ও তাঁর সৃষ্ট চরিত্ররা গুরূত্ব নিয়ে হাজির হয়েছে
১৯৯২ সালে নবারুণের হারবার্ট এর প্রথম প্রকাশের কিছুদিন আগে ভেঙেছে সোভিয়েত সমাজ ব্যবস্থাসোভিয়েত সমাজবাদ ও তার চরিত্র নিয়ে অজস্র বিতর্ক এমনকী বামপন্থীদের মধ্যেও আগের তিন চার দশক জুড়েই বহমান ছিলকিন্তু তা স্বত্ত্বেও সোভিয়েতের পতনকে গোটা দুনিয়ার মতো আমাদের এখানেও আমরা একটা বিরাট ধাক্কা হিসেবেই আসতে দেখেছিবিশেষত সোভিয়েত সমাজবাদের পতনের সঙ্গে ভারতের অর্থনীতির চরিত্র পরিবর্তনের সময়সীমা সমীকৃত হয়ে যাওয়ার ফলে এই ধাক্কা শুধু চেতনা স্তরে নয়, দৈন্যন্দিন জীবনপ্রবাহেও অনুভূত হতে থাকেনবারুণ নিজে এই ধাক্কাকে কীভাবে দেখেছেন আর তার মধ্যে থেকে কীভাবে দাঁড় করাতে চেয়েছেন তাঁর সাহিত্য রচনাকে, তা জানিয়ে তিনি একটি গল্প সংকলনের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন " মানুষের এগিয়ে চলার, শোষণমুক্তি ও সমাজব্যবস্থা পাল্টানোর মডেল, পুঁজি ও প্রতিক্রিয়ার আঘাতে ও বামপন্থীদের আবশ্যিক আত্মসমীক্ষার অভাবের কারণে অনেকটাই তছনছ হয়ে গেছেযে শতক সবচেয়ে আশা জাগিয়েছিল সেই শতক শেষ হচ্ছে অবসাদে বিষাদে যন্ত্রণাজর্জর অবস্থায়আমি দৈনন্দিনতায়, প্রত্যহ নিকটে ও দূরে, নিয়ত যা দেখতে পাই তা হল পরতে পরতে স্তরে স্তরে সমাজের ভিন্ন ভিন্ন বর্গের ওপর চাপিয়ে দেওয়া শোষণ, নতুনতর ঔপনিবেশিকতা ও সংস্কৃতি সাম্রাজ্যবাদের অমানুষীকরণের দেখা না দেখা হাতকড়া ও চোখভুলোনো ঠুলির ভারসামন্ততন্ত্র বা পুঁজিবাদের বালক বয়সের প্রত্যক্ষ নিষ্ঠুরতার চেয়েও এ যেন অধিকতর মারাত্মক, জঘন্য ও অপমানজনকএই দলিত মথিত মানুষ ও তাদের জীবনের এক বিচিত্র ক্যালেইডোস্কোপের মধ্যে আমার জীবন কাটছেচারপাশে তাই আমি দেখিকিন্তু চূড়ান্ত নিরিখে এই বাস্তবকে আমি চিরস্থায়ী বলে মানি নাবাস্তবকে পাল্টাতে হবেহবেইএ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় চেতনা তৈরি করার ক্ষেত্রে সাহিত্যের অবশ্যই একটি বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে।"
নবারুণের লেখা এই কাজটা কীভাবে করতে চেয়েছে সেটা আমরা তাঁর বিভিন্ন রচনায় – উপন্যাসে, গল্পে, কবিতায়, প্রবন্ধে খুঁজতে চাইবোশুরু করা যাক ‘হারবার্ট’ দিয়েই
আমাদের চোখ এড়াতে পারে না যে দিনটির অনুপুঙ্খ কিন্তু ছেঁড়া ছেঁড়া বর্ণনা দিয়ে এই উপন্যাস শুরু হচ্ছে সেটি ১৯৯২ এর ২৫ মে২৫ মে তারিখটি বিশেষ গুরূত্বে অধিষ্ঠিত হয়ে আছে এর আড়াই দশক আগের এক ঘটনার সূত্রেউত্তরবঙ্গের তখনো অবধি প্রায় অচেনা অজানা এক এলাকায় ক্রমশ জঙ্গী হয়ে উঠতে থাকা কৃষক সংগ্রামের ওপর সেদিন গুলি চলেছিলসেই ঘটনা জন্ম দিয়েছিল দেশজোড়া এক উত্তুঙ্গ বিপ্লবী আন্দোলনেরসেই এলাকার ও এলাকা সূত্রে আন্দোলনের নাম নকশালবাড়িউপন্যাসের ভেতরে ঢুকে আমরা জানতে পারি হারবার্ট এর সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিল তার ভাইপো বিনুসে কলেজে পড়তে পড়তে তার সমবয়স্ক ও সমমনস্ক আরো অনেকের মতো জড়িয়ে পড়ে সমাজ বদলের এই নাছোড় লড়াইয়ে আর শেষপর্যন্ত রাষ্ট্রশক্তির হাতে নিহত হয় উপন্যাসের শেষে এসে আমরা হারবার্ট এর দাহকার্যের সময় ঘটে যেতে দেখি এক বিরাট বিস্ফোরণআসলে হারবার্টকে পোড়ানো হয়েছিল তার বিছানা সমেত ই, যে বিছানায় লুকানো ছিল বিনুর গোপনে রেখে দেওয়া ডিনামাইট স্টিক, রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহারের অস্ত্র বিনু সে অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ পায় নি, কিন্তু আড়াই দশক পর তা ঠিকই ঘটালো এক বিস্ফোরণ, যখন নব্য উদার অর্থনীতি তার আগমনী গান শুনিয়ে বিনুদের হারবার্টদের পাড়াতে পাড়াতে, বাড়ির ছাদে ছাদে বসিয়ে দিচ্ছে ডিস অ্যান্টেনা,  ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে স্টার টিভির মনোরঞ্জনযাকে নবারুণ বলবেন সংস্কৃতি সাম্রাজ্যবাদের’ এক নিশান, যা তখন সদ্য এদেশে তার ডানা মেলছে।
কৈশোর পরবর্তী হারবার্ট এর ব্যক্তিজীবন ও তার সমকালীন জীবনের প্রায় দীর্ঘ সারহীন অধ্যায়ের মধ্যে দুটি চমকপ্রদ পর্ব আমাদের সামনে নবারুণ হাজির করেছেন প্রথমটি অবশ্যই সত্তরের ঝোড়ো দিনগুলি, যখন বিনুর সূত্রে নকশালবাড়ি আন্দোলনের সংগে তার পরোক্ষ সংযোগদ্বিতীয়টিপরোক্ষভাবে বিনুর ডায়েরী সূত্রেই শুরু হওয়া হারবার্টের ‘মৃতের সহিত কথোপকথন’ এর অধ্যায়, যখন ব্যর্থ বিপ্লব প্রচেষ্টার পর দু দশকের স্থিতাবস্থা কাটিয়ে এদেশে এসে পৌছচ্ছে নয়া উদারবাদের জমানা
নবারুণের বিভিন্ন লেখাতেই হারবার্ট এর মত চরিত্ররা, যারা প্রথাগত অর্থে ব্যর্থ এবং ফলত সমাজে পরিবারে ব্রাত্য, ভীড় করে আসে; আখ্যানে কেন্দ্রীয় স্থান দখল করে নেয়। এটা আমরা নবারুণের প্রথম উপন্যাস হারবার্ট থেকেই লক্ষ্য করতে শুরু করি। ১৯৬৯ এ বিনু যখন জিওলজি পড়তে কলকাতায় আসছে, তখন থেকেই পরিবারে ব্রাত্য হারবার্ট কাকার সঙ্গে কিন্তু তার এক আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এর আগে অবশ্য বিনুর বাবা, কৃষ্ণদাদার সূত্রে হারবার্টের সোভিয়েত জমানার চলচ্চিত্রের সঙ্গে একটু আধটু পরিচয় হয়েছিল“কমিউনিস্ট পার্টির অনুষ্ঠানে কৃষ্ণদাদার সঙ্গে গিয়ে হারবার্ট ফল অব বার্লিন, আরও কি সব যুদ্ধের ডকুমেন্টারি দেখেছিলএকবার দেখেছিল বরফের চাঙড় উল্টে যোদ্ধাদের অতল জলে তলিয়ে যেতেহারবার্টকে কেউ বলে নি ওটা আইজেনস্টাইনের আলেকজান্ডার নেভস্কি”
কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে হারবার্ট এর আরো খানিক প্রত্যক্ষ ও দীর্ঘ সংযোগ বিনুর হাত ধরেবিনুর বাবার অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ততদিনে তিন ভাগ হয়েছেসি পি আই ভেঙে প্রথমে সি পি আই (এম) তারপর সেই ‘নয়া সংশোধনবাদ’ ভেঙে সি পি আই (এম এল)হয়ত বাবার থেকেই শেখা একটা ছড়া বিনু তার ছেলেবেলাতেই শিখিয়েছিল কাকা হারবার্টকে‘পুলিশের লাঠি ঝাঁটার কাঠি/ ভয় করে না কমিউনিস্ট পার্টি’সেই বিনু কলেজ জীবনে এসে কাকা হারবার্টকে শোনায় মাও সে তুং এর আহ্বান – “আমাদের সামনে হাজার হাজার শহীদ মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের কথা মনে পড়লেই আমাদের প্রতিটি জীবিত লোকের হৃদয় বেদনায় ভরে ওঠে, এমন কী স্বার্থ আছে যা আমরা ত্যাগ করতে পারব না অথবা এমন কী ভুল আছে যা আমরা শুধরে নিতে পারব না ?”
নকশালবাড়ি আন্দোলন পর্বের অনেক ছবিকেই আশ্চর্য বাস্তবতায় হারবার্ট উপন্যাসে নিয়ে এসেছেন নবারুণ, এনেছেন নির্মোহতার আড়ালে থাকা একটা ব্যক্তিগত টানকেও হয়ত বারাষ্ট্র ও তার আগ্রাসী দমনমূলক চরিত্র নিয়ে নবারুণ আদ্যন্ত সোচ্চার ছিলেন১৯৭০ এর ১৯ নভেম্বর বারাসাতের হত্যাকাণ্ড বা ৯ মে ১৯৭১ এর কাশীপুর বরানগর হত্যাকাণ্ডর প্রসঙ্গ এ উপন্যাসে সরাসরি এসেছেবারাসাত হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সি পি আই (এম এল) এর সাধারণ সম্পাদক চারু মজুমদারের লেখা ২২ নভেম্বর ১৯৭০ এর ইস্তাহারটি পর্যন্ত তিনি তুলে এনেছেন এ উপন্যাসে“আজ প্রত্যেকটি ভারতবাসীর পবিত্রতম কর্তব্য এইসব কাপুরুষ বিদেশীদের আজ্ঞাবহ খুনেদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি করাএটা আজ দেশবাসীর দাবী, দেশপ্রেমিকদের দাবীপ্রত্যেক বিপ্লবী কর্মীকে এই বীর শহীদদের হত্যার বদলা নেবার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবেএই জল্লাদরা ভারতবাসীর শত্রু, প্রগতির শত্রু এবং বিদেশীর অনুচরএদের শেষ না করলে ভারতবর্ষের মুক্তি নেই
চারু মজুমদারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিনু আর মাঝে মাঝে সে যুক্ত করে নেয় হারবার্টকেও‘হারবার্টকে একদিন বেশ কিছু টাকা আর মাও সে তুং – লিন পিয়াও এর ছবি ছাপা রশিদ বই দিয়ে বিনু পাঠাল লেক মার্কেট এলাকায় কোনও এক বিজয়কে পৌঁছে দেবার জন্য’বিজয় হারবার্টকে উষ্ণ স্বরে জানিয়েছিল ‘ অভিনন্দন কমরেডবিনয় আপনার কথা অনেক বলেছেআপনার মতো বিশ্বস্ত বন্ধুর আমাদের দরকার’ পুলিশের আওতা থেকে গোপন দলিল পত্র সরানোর কাজেও হারবার্ট ছিল বিনুদের সহায়ক‘বিনুর কথামতো চিলছাদে হারবার্ট অনেক কিছু পুড়িয়েছেদেশব্রতী, দক্ষিণ দেশ, চট্টগ্রামে ছাপানো একটি গেরিলা যুদ্ধের বাংলা ম্যানুয়াল, কিউবার ট্রাইকন্টিনেন্টাল পত্রিকা থেকে সংগৃহীত মলোটভ ককটেলের নকশা, রেডবুক, কিছু চিঠি’
পুলিশের গুলিতে বিনু মারা গেলমৃত্যুর আগে তার করা কবিতার শেষ উচ্চারণ শুনেছিল হারবার্টই, শুনেছিল লুকানো ডায়েরী সংক্রান্ত অস্পষ্ট শেষ জবানী এই ডায়েরীর সূত্র ধরেই স্থিতাবস্থার সময় হারবার্টও নেমে পড়ল মৃতের সঙ্গে কথোপকথনের লোক ঠকানো ব্যবসায়। বিষয়বুদ্ধিও জাগ্রত হল। চলল ফূর্তির আসর, সঙ্গী পাড়ার সাব অলটার্নরা। নকশালবড়ি আন্দোলনের পরের একটা দীর্ঘ অধ্যায় জুড়ে আমরা দেখেছি রাষ্ট্রশক্তির দমনমূলক স্বৈরতন্ত্র ও তারপর বামপন্থার আর এক নয়া নিরীক্ষা, যেখানে রাষ্ট্রশক্তির মধ্যেই বামপন্থা অনেকটা অন্বিত হওয়ার দিকে এগিয়েছে। স্থিতাবস্থার এই পর্বে বিপ্লবী বিনুর নির্দেশকে আধা চেতনে ব্যবহার করে হারবার্টকে অনেকটা মানসিক যন্ত্রণা ও মাঝে মাঝেই বেরিয়ে আসা অনুতাপ সহ আমরা দেখি ‘কিছু করে খাওয়া’র রাস্তায় চলে যেতে। অবশ্যই শেষপর্যন্ত তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না, আপাতত শান্তিকল্যাণ এর মাঝেও হারবার্ট নিজের অজান্তেই শুয়ে থাকে ডিনামাইট স্টিক ভরা বিছানায়, এক মহা বিস্ফোরণের সমস্ত সম্ভাবনা নিয়েই।
নবারুণ এর সমস্ত উপন্যাসে, পরিস্থিতির নানা ভিন্নতার মধ্যেও এই বিদ্রোহ বিস্ফোরণের সম্ভাবনা আমরা লক্ষ্য করতে থাকি, হারবার্টে যার বলিষ্ঠ সূচনা।